Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সাথী ফসল হিসেবে আমনের সাথে সরিষার আবাদ এবং সরিষার তেলের গুণাগুণ

সাথী ফসল হিসেবে আমনের সাথে সরিষার আবাদ এবং সরিষার তেলের গুণাগুণ
কৃষিবিদ মোঃ আব্দুল্লাহ-হিল-কাফি
সরিষার তেল গ্রাম বাংলার একমাত্র ভোজ্যতেল ছিল। এর ওষুধি গুণাগুণের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে এ তেল। দেশে প্রতি বছর প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল প্রয়োজন হয়। পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে ও বৈশি^ক পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশের ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল রাখাসহ আমদানি নির্ভরতা কমাতে চাহিদার ৪০ শতাংশ ভোজ্যতেল স্থানীয়ভাবেই উৎপাদনের লক্ষ্যে সরিষা আবাদ বাড়ানোর কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
রিলে ফসল হিসেবে আমন ধানের সাথে সরিষার চাষ
এই চাষ পদ্ধতিতে আমন ধান কর্তনের দুই সপ্তাহ আগে সরিষার জন্য বেসাল ডোজ সার দিয়ে ৪-৫ দিন পর অর্থাৎ ধান কাটার ১০ দিন পূর্বে ধানের জমিতে বারি সরিষা১৪, বারি সরিষা১৭ বা বারি সরিষা২০ জাতের বীজ বপন করতে হবে। যে সকল জমি আমন ধান কর্তনের পর ‘জো’ আসে না, জমিতে পানি জমে থাকে না কিন্তু কাদাভাব থাকে সে সমস্ত জমিতে সরিষা চাষ না করে কয়েক মাস পতিত রেখে তারপর বোরো ধান চাষ করা হয়, সে সকল জমি রিলে পদ্ধতিতে সহজেই সরিষা চাষের আওতায় আনা যায়। রিলে বা সাথী পদ্ধতিতে ফসল চাষ করতে হলে খেয়াল রাখতে হবে যে, জমিতে যেন পানি জমে না থাকে এবং মাটি কাদা কাদা অবস্থায় থাকে।
ধান কাটার ১০-১৫ দিন পূর্বে সরিষা চাষের জন্য ধানের জমিতে সার ছিটিয়ে দিতে হবে। ছিটানো সারের পরিমাণ হলো: প্রতি শতকে টিএসপি ৭০০-৮০০ গ্রাম, এমওপি ৫০০ গ্রাম, জিপসাম ৬০০-৭০০ গ্রাম, জিংক বা দস্তা সার ২০-২৫ গ্রাম, বোরন ৩০-৩৫ গ্রাম। সার ছিটিয়ে ৪-৫ দিন পর অর্থাৎ ধান কর্তনের ৮-১০ দিন পূর্বে আমন ধানের জমিতে বিঘাপ্রতি ১ কেজি সরিষা বীজ ছিটিয়ে বপন করতে হবে। বীজ বপনের ৮-১০ দিন পর ধান কাটতে হবে। তবে ধান কাটার সময় যদি ধানের খড় ১২ ইঞ্চি উঁচু রেখে কাটা হয় তবে তা সরিষার বৃদ্ধির জন্য উপকার হবে। ধান কেটে তা বেশি দিন জমিতে না রেখে ২-৩ দিনের মধ্যে সরিয়ে ফেলতে হবে। এতে সরিষা গাছ পর্যাপ্ত আলো বাতাস পেয়ে পরিমিত খাদ্য তৈরি করতে পারবে।
কাটা ধান সরিয়ে নেবার পর অর্থাৎ ২-৩ দিন পর সরিষার জমিতে প্রতি শতকে ইউরিয়া ৩০০ গ্রাম হিসেবে ছিটিয়ে উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে জমিতে রসের পরিমাণ কম থাকলে বিকেলে ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দিতে হবে। গাছের বয়স ২৫-৩০ দিন হলে যদি জমিতে অতিরিক্ত ঘাস থাকে তবে নিড়ানি দিতে হবে। এরপর প্রতি শতকে ইউরিয়া ৩০০-৩৫০ গ্রাম উপরিপ্রয়োগ করতে হবে এবং বাকি ইউরিয়া ফুল আসলে প্রতি শতকে ইউরিয়া ৩০০-৩৫০ গ্রাম উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। সার উপরিপ্রয়োগের সময় জমিতে রস থাকা দরকার। প্রয়োজনে হালকা সেচ প্রদান করা যেতে পারে।
সরিষাতে তেমন রোগ ও পোকার আক্রমণ হয় না। তবে দেরিতে বুনলে জাব পোকার আক্রমণ হয়। আশ্বিনের শেষ ভাগ ও মধ্য-কার্তিক (অক্টোবর) অর্থাৎ আগাম সরিষা বপন করলে জাব পোকার আক্রমণের আশঙ্কা কম থাকে। প্রতি গাছে ৫০টির বেশি পোকা থাকলে ম্যালাথিয়ন-৫৭ ইসি বা সুমিথিয়ন-৫৭ ইসি বা ফলিথিয়ন-৫৭ ইসি বা একোথিয়ন-৫৭ ইসি, ডায়াজিনন ৬০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে মিশিয়ে বিকেলে স্প্রে করতে হবে।
৮০% সরিষা পেকে গেলে সকালের দিকে কর্তন করতে হবে। সরিষা কাটার পর জাগ দিয়ে রাখতে হবে। তারপর শুকিয়ে মাড়াই, ঝাড়াই ও শুকানো কাজ করতে হবে। এ পদ্ধতিতে চাষ করলে বিঘাপ্রতি ৩-৪ মণ সরিষার ফলন পাওয়া যায়।
সাধারণত এক কেজি সরিষা থেকে ৩৫০-৪০০ গ্রাম তেল উৎপাদন হয়, অর্থাৎ বোরো ধান চাষের আগে জমি পতিত না রেখে আমনের সাথে সরিষা রিলে আবাদ করে প্রতি বিঘায় প্রায় ৫০-৬০ কেজি তেল পাওয়া যায়। এতে করে একটি পরিবারে সারা বছরের তেলের চাহিদা পূরণ হবে।
আমনের জাত পরিবর্তন করে সরিষা চাষ
 ব্রি ধান৩৯ এর পরিবর্তে স্বল্প জীবনকালীন ধান ব্রি ধান৭৫ (জীবনকাল ১১৫ দিন) জাত চাষ করতে হবে; ব্রি ধান৪৯ এর পরিবর্তে জীবনকালীন ধান ব্রি ধান৭৫ (জীবনকাল ১১৫ দিন) বা ব্রি ধান৮৭ (জীবনকাল ১২৭ দিন) বা বিনা ধান১৬/বিনা ধান১৭/বিনা ধান২২ (১১৫ দিন) জাত চাষ করা; স্বর্ণা জাতের পরিবর্তে ব্রি ধান৭৫ বা ব্রি ধান৯৫ অথবা বিনা ধান১৬, বিনা ধান১৭, বিনা ধান১৯, বিনা ধান২২ জাতের চাষ; এছাড়াও মধ্যমেয়াদি আমনের নতুন জাত ব্রি ধান১০৩ চাষ করেও স্বলপমেয়াদি সরিষার চাষ করে বোরো ধান করা যায়।
শস্যবিন্যাস পরিবর্তন করে সরিষা আবাদ বৃদ্ধি শস্যবিন্যাস নি¤েœ দেওয়া হলো : রোপা আমন ধান-পতিত-বোরো ধান শস্যবিন্যাসকে রোপা আমন ধান-সরিষা-বোরে ধান; বছরব্যাপী আখ শস্যবিন্যাসকে আখ+সরিষা; ফল বাগান শস্যবিন্যাসকে ফল বাগান+সরিষা ; রোপা আমন-পতিত-পতিত শস্যবিন্যাসকে রোপা আমন-সরিষা-পতিত ; পতিত-বোরো-পতিত শস্যবিন্যাসকে সরিষা-বোরো-পতিত; পতিত-বোরো-আউশ শস্যবিন্যাসকে সরিষা-বোরো-আউশ।
সরিষার তেলের উপকারিতা
হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ায় : সরিষার তেলের মধ্যে স্যাচুয়েটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (ঝঅঋ) এবং আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডের ভারসাম্য বজায় থাকে। এছাড়া সরিষার তেল হচ্ছে ওলেইক অ্যাসিড সমৃদ্ধ এবং এর মধ্যে লিনোলেনিক এবং লিনোলেইক অ্যাসিডের ভারসাম্য আছে, যেগুলো হার্টের পক্ষে ভাল। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সরিষার তেল চড়া তাপমাত্রায় রান্নার সময় স্থিতিশীল থাকে এবং নিয়মিত সরিষার তেল গ্রহন করলে ৭১% হৃদরোগের আশঙ্কা কমে।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল হিসাবে সরিষার তেল : সরিষার তেল অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল হিসাবে কাজ করে। এটি ব্যাকটিরিয়াল ঝিল্লির কোশের (সেল মেমব্রেন) ক্ষতি করে এবং দেখা গিয়েছে সাধারণ সংক্রামক ব্যাকটিরিয়া যেসন- এসোরিকিয়া কোলি যা থেকে মূত্রনালীর সংক্রামণ এবং ডায়রিয়া হয় এবং টাইফয়েডের জন্য জন্য দায়ি সালমোনেলা টাইফির বিরুদ্ধে এটির সম্ভাব্য অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রক্রিয়া কাজ করে।
শ্বাসকষ্ট দূর হয় : একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়েছে যে শ্বাসকষ্ট সম্পর্কিত যে কোনো ধরনের সমস্যা কমাতে সরিষার তেলের কোনও বিকল্প নাই।
আর্থ্রাইটিস রোগের কষ্ট কমায় : সেলেনিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম নামক দুটি খনিজ পদার্থ সরিষার তেলে খুব বেশি পরিমাণ থাকে, যা আর্থ্রাইটিসের প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি এই রোগের প্রকোপ হ্রাসেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
মাইগ্রেনের কষ্ট কমায় : মাইগ্রেনের কষ্ট কমাতে ম্যাগনেসিয়াম দারুণ কাজে করে। তাই এই তেলে রান্না করা খাবার খেলে মাইগ্রেনের কষ্ট কমতে পারে। সরিষার তেলে ভাজা মাছ খেলে শরীরে ওমাগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে : ডার্মাফাইট হচ্ছে এমন ধরনের ছত্রাকের জীবাণু যা ত্বক এবং চুলে সংক্রামণ ঘটায়। কিছু ডার্মাফাইট যেমন মাইক্রোসপোরাম ক্যানিস এবং ট্রিকোফাইটোন রাবরাম এর বিরুদ্ধে সরিষার তেলের একটি বিষাক্ত প্রতিক্রিয়া আছে। সরিষার তেল, নারিকেল তেল এবং আমলা তেলের ওপর একটি প্রিক্লিনিক্যাল সমীক্ষায় জানা গিয়েছে চুল বৃদ্ধির জন্য সরিষার তেল সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। সরিষার তেলে প্রচুর বিটা ক্যারোটিন ভিটামিন-এ তে রূপান্তরিত হয়ে চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফ্যাটি এসিড ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা চুলের বৃদ্ধিতে অনেক সাহায্য করে।
সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে : সরিষার তেলে থাকা অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এজেন্ট দেহের ভেতরে জীবাণুদের প্রবেশ করতে দেয় না। আর যদি কোনো ক্ষতিকর এজেন্ট প্রবেশ করে তবে তাকে মেরে ফেলে। সরিষার তেল খেলে বিশেষ করে কোলন এবং ইন্টেস্টাইনে ইনফেকশন কম হয়।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে : সরিষার তেলে রয়েছে কপার, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং সেলেনিয়াম। এই খনিজগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
প্রাকৃতিক লোশন : গায়ের তাপমাত্রা কমাতে সরিষার তেল বেশ কার্যকরী। সরিষার তেলে রয়েছে গ্লুকোসিনোলেট, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং ছত্রাক প্রতিরোধক উপাদান। যা রক্ষা করে ছোঁয়াচে জাতীয় রোগ থেকে ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে থাকে।
ত্বকের তামাটেভাব দূর করে : দই, বেসন, সরিষার তেল ও কয়েকফোঁটা লেবুর রস একত্রে মিশিয়ে তা ত্বকে লাগাতে হবে এরপর ১০-১৫ মিনিট পরে ঠা-া পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে সপ্তাহে ৩ বার ব্যবহার করলে ভাল ফল পেতে পারেন।
প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন : সরিষার তেলে উচ্চমাত্রার ভিটামিন-ই থাকায় ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থ থেকে ত্বককে সুরক্ষা করে। ভিটামিন-ই বলিরেখা ও বয়সের ছাপ দূর করতেও সাহায্য করে। তাই সানস্ক্রিন লোশনের মতোই ব্যবহার করতে পারেন।
ক্ষুধা বৃদ্ধি করে : পাকস্থলীর পাচক রস উদ্দীপিত করার মাধ্যমে ক্ষুধা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে সরিষার তেল। যাদের ক্ষুধার সমস্যা আছে তারা রান্নার সময় সরিষায় তেল ব্যবহার করতে পারেন।
উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে
সরিষার তেল পরিপাক, রক্ত সংবহন ও রেচনতন্ত্রের শক্তিশালী উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া খাওয়ার পাশাপাশি বাহ্যিকভাবে শরীরে ম্যাসাজ করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন এবং ঘর্ম গ্রন্থি উদ্দীপিত হয় এবং শরীরের তাপমাত্রা কমে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় : সরিষার তেলে গ্লুকোসিনোলেট ও মিরোসিনেস নামক উপাদান থাকে যা অ্যান্টিকারসিনোজেনিক উপাদান হিসেবে পরিচিত। এর ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট কোলোরেক্টাল ও গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ক্যান্সার থেকে সুরক্ষাও প্রদান করে।
আসুন সরিষা আবাদ বৃদ্ধি করে দেশকে তেল ফসলে সমৃদ্ধ করি। বর্তমানে আবাদকৃত টরি-৭, মাঘী, ডুপিসহ স্থানীয় জাতের পরিবর্তে উচ্চফলনশীল সরিষার জাত বিনা-৪, বারি সরিষা৯, বারি সরিষা১৪, বারি সরিষা১৭, বারি সরিষা২০         প্রভৃতি জাত সম্প্রসারণ করতে করি। এ ছাড়া অনাবাদি পতিত, অনাবাদি চরাঞ্চল, উপকূলের লবণাক্ত, হাওর ও পাহাড়ি অঞ্চলকে তেলজাতীয় ফসল চাষের আওতায় আনতে সচেষ্ট হই। এভাবেই বাংলাদেশে সরিষাসহ অন্যান্য তেল উৎপাদনে নতুন সূর্য উদিত হতে পারে।

লেখক : আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, রাজশাহী, মোবাইল : ০১৮১৯৯২২৬১৩ 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon